পদ্মা নদী - রচনা সম্পর্কে জানুন




Image

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে লালন করে আর তা নির্মিত হয়েছে বিখ্যাত পদ্মা নদীর উপরে। প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, নিচে তোমাদের জন্য পদ্মা নদী - রচনা যথাযথভাবে লিখা হলো। পদ্মা নদীর রচনা পড়ে তোমরা আরো যে রচনা লিখতে পারবে তা হল -

আমার দেখা পদ্মা নদী।

পদ্মা নদী - রচনা 

ভূমিকা


বসে আছি পদ্মা নদীর কুলে,

আপন মনে দেখছি ওই পদ্মাকে।

যার বুকে গ্রাস হচ্ছে,

পদ্মা নদীর উজান বাঁকে।

বাংলাদেশের যে কয়েকটি বড় নদী রয়েছে পদ্মা নদী হল তার মধ্যে অন্যতম একটি নদী। পদ্মা নদী হলো বাংলাদেশের একটি প্রধান নদী। পদ্মা নদীর উৎপত্তি হয়েছে ভারতের হিমালয়ে। ভারতে গঙ্গা নামে উৎপত্তি হয়ে এই পদ্মা নদী বাংলাদেশে পদ্মা নামে পরিচিতি লাভ করেছে এবং এই নদীটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। পদ্মা নদীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে পদ্মা সেতু। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন পদ্মা সেতুতে এসে ভিড় জমায় পদ্মা পাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এবং পদ্মা পাড়ের ইলিশ খেতে।

পদ্মা নদীর ইতিহাস

বাংলাদেশের প্রধান নদী হল পদ্মা নদী। এটি ভারতের গঙ্গা নদীর প্রধান শাখা এবং বাংলাদেশের অন্যতম দীর্ঘতম নদী। ভারতে গঙ্গা নামে উৎপত্তি হয়ে এই পদ্মা নদী বাংলাদেশে পদ্মা নামে পরিচিতি লাভ করেছে। বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এই নদী চাঁদপুরে এসে মিলিত হয়েছে মেঘনা নদীর সাথে। এই পদ্মা নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ১২০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১০ কিলোমিটার। বাংলাদেশে পদ্মা নদীর প্রকৃতি সর্পিলাকার যার কারণে বলা যায় গঙ্গা নদীর নিম্ন স্রোত ধারার নাম পদ্মা।

পদ্মা নদী নামকরণের ইতিহাস

পদ্মা নদী প্রাচীন হিন্দু লিপিতে দেবী লক্ষ্মীর উপন্যাস হিসেবে পদ্মা ফুলের জন্য সংস্কৃত উপন্যাসে পদ্মা নদী নামে উল্লেখ করা হয়েছে। ভাগীরথী নদীর অফটেক পয়েন্ট এর নিচের অংশটি পদ্মা নামে অভিহিত করা হয়েছে। এই নদীর গতিপথের নিচের অংশকে বলা হয় পদ্মা নদী। পদ্মা নদীর আরেকটি শাখা নদী রয়েছে যার নাম হল হুগলি নদী। রাজা রাজবল্লবের অনেক কীর্তি পদ্মার ভাঙ্গনের মুখে এসে ধ্বংস হয়ে যায় বলে পদ্মা নদীর আরেক নাম হলো কীর্তিনাশা নদী। তবে সংস্কৃত মতে পদ্মফুলের উৎপত্তির কারণেই এই নদীর নামকরণ করা হয়েছে পদ্মা নদী।

পদ্মা নদীর গতি প্রকৃতি

পদ্মা নদী ভারতের হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশের রাজশাহী জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পদ্মা নামে গঙ্গার অন্যতম একটি শাখা নদী হল ভাগীরথী যা হুগলির দিকে প্রবাহিত হয়েছে। পদ্মা নদীর উৎপত্তিস্থল থেকে ২২০০ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দের কাছে এসে যমুনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে এবং এখানে পদ্মা নামে আরো পূর্ব দিকে চাঁদপুর জেলায় মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এরপর পদ্মা মেঘনার মিলিত প্রবাহ মেঘনা নদী নাম ধারণ করে দক্ষিণ দিকে বঙ্গোপসাগরে সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

পদ্মা নদীর দৈর্ঘ্য

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান এবং দীর্ঘতম নদী হল এই পদ্মা নদী। পদ্মা নদীর উৎপত্তি হয়েছে ভারতের হিমালয়ে এবং বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের চাপাইনবাবগঞ্জ জেলা দিয়ে এই নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পদ্মা নদীর দৈর্ঘ্য হল ১২০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ হলো ১০ কিলোমিটার। পদ্মা নদীর প্রকৃতি সর্পিলাকার যার কারণে বলা যায় গঙ্গা নদীর নিম্নস্রোত ধারার নাম হলো পদ্মা নদী।

পদ্মা নদীর উপনদী এবং শাখা নদী

পদ্মা নদীর অনেক উপনদী এবং শাখা নদী রয়েছে। তবে পদ্মা নদীর প্রধান উপনদী গুলো হলো - মহানন্দা ও পূর্ণ ভবা। বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা দিয়ে মহানন্দা নদী প্রবাহিত হয়েছে এবং বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে পূর্ণ ভবা নদী প্রবাহিত হয়েছে। পদ্মা নদীর অনেকগুলো শাখা নদী রয়েছে এগুলো হল - গড়াই, আড়িয়াল খাঁ, বড়াল, মাথাভাঙ্গা, কপোতাক্ষ,কুমার ইত্যাদি। আবার পদ্মা নদীর বিভিন্ন শাখা নদী গুলো হল - ভৈরব, পশুর, মধুমতি ইত্যাদি।

পদ্মা নদীর বিস্তৃতি

পদ্মা নদী ভারতের হিমালয়ে উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই নদী বাংলাদেশের কুষ্টিয়া, যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মাগুরা, বাগেরহাট, রাজবাড়ি, ফরিদপুর, মাদারিপুর, শরীয়তপুর, বরিশাল,গোপালগঞ্জ, পটুয়াখালী ইত্যাদি জেলার উপর দিয়ে বিস্তৃতি লাভ করেছে।

পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত স্থাপত্য

পদ্মা নদীর ওপর অনেক স্থাপত্য নির্মিত হয়েছে তার মধ্যে পদ্মা সেতু হলো অন্যতম যা ২০২২ সালের ২৫ শে জুন উদ্বোধন করা হয়েছে। এছাড়াও পদ্মার নদীর ওপর রয়েছে বিখ্যাত লালন শাহ সেতু যা পাবনা জেলার পাকশিতে অবস্থিত। এছাড়া ও বাংলাদেশের এই পদ্মা নদীর উপর তৈরি হয়েছে একাধিক সড়ক সেতু ও রেল সেতু। এই পদ্মার ওপর রেল সেতু হলো একটি ঈশ্বরদীর কাছে এবং আরেকটি মাওয়া ঘাটের কাছে। এছাড়াও ঈশ্বরদীর পাকশিতে হার্ডিং ব্রিজ নির্মিত হয়েছে যা ব্রিটিশ ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে ।

মহান মুক্তিযুদ্ধে পদ্মা নদী নিয়ে স্লোগান

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পদ্মা নদীকে নিয়ে বাঙালিকে উজ্জীবিত করার স্লোগান ছিল- "তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুন"। আর এটা শুধু স্লোগান নয়, এটা পদ্মা নদীর মাধ্যমে বাংলাদেশকে ফুটিয়ে তোলার একটি স্লোগান। ভারত সরকার গঙ্গায় বাঁধ দেওয়ার ফলে বাংলাদেশে পদ্মা নদীতে শুকনো মৌসুমে তেমন পানি প্রবাহ থাকে না যার কারণে মাছের খাদ্য ফাইটোপ্লাঙ্কটন ও কমে যায়।

সাহিত্যে পদ্মা নদী

পদ্মা নদীর তীরের মানুষের জীবনধারাকে কেন্দ্র করে বিখ্যাত উপন্যাসিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাস রচনা করেছেন। আবার কবি কাজী নজরুল ইসলামকে পদ্মা নদীর নৈসর্গিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নানাভাবে প্রবাহিত করেছে। কবির বিখ্যাত কিছু গানের মধ্যে পদ্মা নদীর হারানো ঐতিহ্য ও সুন্দর্য ফুটে উঠেছে। আবার প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক আবু ইসহাক পদ্মা পাড়ের মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ে পদ্মার পলি দ্বীপ নামে উপন্যাস রচনা করেছেন। পদ্মা নদীর ফলে যে বন্যা সংঘটিত হয় যার কারণে পদ্মাকে আবার বলা হয় সর্বনাশা নদী। 

আরো পড়ুনঃ  অদম্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ - রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

বিশ্ব বিখ্যাত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাইতো তার কবিতার মাধ্যমে পদ্মা নদী সম্পর্কে লিখেছেন -

আমার নৌকা বাধা ছিল পদ্মা নদীর পারে,

হাঁসের পাতি উড়ে যেত মেঘের ধারে ধারে।

জানিনা মন কেমন করা লাগতো কি সুর হাওয়ার,

আকাশ বেয়ে দূর দেশেতে উদাস হয়ে যাওয়ার।

পদ্মা নদীর ইতিহাস ও ঐতিহ্য

পদ্মা নদীর ইতিহাস ও ঐতিহ্য পর্যালোচনা করলে পদ্মা নদীর বিভিন্ন অবদান স্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে। প্রাচীনকালে পদ্মা পাড়ের পালল ভূমিতে চাষাবাদ করে আর যোগাযোগের সুবিধার্থেই রাজশাহীর ভৌগোলিক অবস্থানে জনপদের সৃষ্টি হয়েছিল। এছাড়াও কথিত আছে, রাজশাহীর পূর্ণভূমিতে পদ্মার কোলে শায়িত রয়েছেন হযরত শাহ মখদুম রুপোশ রহমতুল্লাহি।তিনি কুমির বাহনে মহাকাল গড়ে অর্থাৎ রাজশাহীর নাপিত দম্পতির নিকট এসেছিলেন পদ্মা নদী দিয়েই আর তখন রাজশাহী অঞ্চলের প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম ছিল পদ্মা নদী।

পদ্মা নদীর অতীত ও বর্তমান অবস্থা

বর্ষাকালে পদ্মা নদী ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করলেও পদ্মা নদীর বর্তমান অবস্থা আর আগের মত নেই কারণ ভারত সরকার পশ্চিমবাংলায় ফারাক্কায় গঙ্গার ওপর ফারাক্কা বাঁধ তৈরি করার কারণে পদ্মা নদীর পূর্বের রূপ আর নেই। পূর্বের মতো আর ইলিশ ভরা ডিম পদ্মা নদীতে ধরা পড়ে না। বর্ষার মৌসুমে পদ্মা নদীতে রেল ও সড়কের উন্নতির ফলে পদ্মা নদী আর পূর্বের স্মৃতি রোমন্থন করে না। এছাড়াও রাজশাহী বাসীর সাথে পদ্মার হৃদয় ও তার ভাটা পড়েনি বরং ক্রমশ উসকে উঠেছে।

আরো পড়ুনঃ মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার - অনুচ্ছেদ সম্পর্কে জেনে নিন

এছাড়াও পদ্মার পানিতে লবণাক্ত বেড়ে গেছে যার কারণে পদ্মার ইলিশের মাছের আর তেমন দেখা মেলে না অথচ পদ্মার ইলিশের স্বাদ অন্য নদীর তুলনায় সেরা। আবার শুষ্ক মৌসুমে পদ্মার পানি এতই কমে যায় যে পদ্মার নদীর বুকে চর জমে যায়।

উপসংহার

পদ্মা নদী বর্ষাকালে যেমন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে শুষ্ক মৌসুমে আবার তেমনি শুকিয়ে যায়। আবার পদ্মা নদী রাজশাহী নগরবাসীর চিত্তবিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। শুধু নগরবাসী নয়, দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটকরা ও পদ্মার উপকণ্ঠে  পদার্পণ করে পদ্মাকে ধন্য করে তোলে। পদ্মা নদী বিখ্যাত হয়ে উঠেছে পদ্মা সেতুর কারণে যা বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি করেছেন। এজন্যই বলা হয়ে থাকে -

পদ্মা নদী মুক্তচিত্তে প্রবাহিত হয় কোন বাধা তাকে প্রতিহত করতে পারে না,

 প্রত্যেক মানুষের উচিত তার থেকে শিক্ষা নেওয়া।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url