টিউমার থেকে কি ক্যান্সার হয় - জেনে নিন

টিউমার আমাদের কাছে একটি সাধারণ সমস্যা এরপরও আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে টিউমার থেকে কি ক্যান্সার হয়! আর আমরা যারা জানতে চাই টিউমার থেকে কি ক্যান্সার হয় আমার আজকের পোস্ট তাদের জন্য। তাহলে আসুন আমরা জেনে নেই টিউমার থেকে কি ক্যান্সার হয়?

Image

বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব জুড়ে ক্যান্সার একটি ভয়ংকর রোগ। কারণ এই ভয়ঙ্কর রোগের নাম শুনলে সবাই ভয়ে এবং আতঙ্কে থাকে। আবার অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে টিউমার থেকে কি ক্যান্সার হয়! তাই আমি আমার আর্টিকালের মাধ্যমে টিউমার থেকে কি ক্যান্সার হয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

ক্যান্সার কিভাবে হয় / ক্যান্সার হওয়ার কারণ

মানব শরীরে যতগুলো রোগ রয়েছে বিশেষ করে জটিল রোগ ক্যান্সার হল তার মধ্যে অন্যতম। ক্যান্সার হয়েছে শুনলেই মানুষের মন ভয়ে আতকে ওঠে আর এর প্রধান কারণ হলো সঠিক সময়ে যদি ক্যান্সার নির্ণয় করতে না পারা যায় এবং সঠিক চিকিৎসা না নেওয়া হয় তাহলে মৃত্যু ঘটতে পারে। তবে কোন সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই ক্যান্সার রোগ হতে পারে। তবে তবে শতকরা ৯০ ভাগ ঝুঁকিপূর্ণ ক্যান্সার পরিবেশগত কারণে হয়ে থাকে আর বাকি দশ ১০ শতাংশ ক্যান্সার বংশানুক্রমে হয়ে থাকে।

এক্ষেত্রে প্রজন্মগত দিক থেকে জিনের কারণে এই ক্যান্সার হয়ে থাকে যেমন - নারীদের ক্ষেত্রে মা, নানী, খালা কারো যদি বেস্ট ক্যান্সার হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে বংশানুক্রমে বাচ্চার ক্ষেত্রে এই ক্যান্সার অনেক সময় হতে পারে। আবার অনেক সময় বাচ্চাদের চোখে অর্থাৎ রেটিনার এক ধরনের ক্যান্সার হয়ে থাকে যা বংশগত ভাবেই হয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের কারণে ক্যান্সার হয়ে থাকে যেমন- ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যাল, কীটনাশক বা পেস্টিসাইড, রেডিয়েশন, হেয়ার ড্রাই, ভেজাল খাবার, বার্নিশ, কিছু জেনেটিক কারণ রয়েছে যার কারণে ক্যান্সার হয়ে থাকে।

আবার অনেক সময় মানুষের অস্থিমজ্জার ভেতরে রক্তের যে মাদার সেল থাকে যাকে স্টেম সেল বলা হয়। মিউটেশন বা অন্য কোন পরিবর্তন ঘটলে সেখানেও ক্যান্সার সেল বা অপরিপক্ক কোষ তৈরি হয় যার কারণে অস্থি মজ্জার ভেতরে ক্যান্সার হয় এবং তা রক্তে প্রবাহিত হয়। অনেক সময় মাদকদ্রব্য গ্রহণের কারণে ক্যান্সার হয়ে থাকে যেমন তামাকের মধ্যে কেমিক্যাল রয়েছে ৪০০০ এর বেশি আর এর মধ্যে ক্যান্সার সৃষ্টি করে ৪৫ টি কেমিক্যাল এবং এই কেমিক্যাল মানুষের দেহে সরাসরি ক্যান্সার সৃষ্টি করে।

আবার অনেক সময় গবেষণায় দেখা যায় ধোঁয়াবিহীন তামাক ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী। আবার কিছু  রাসায়নিক রয়েছে যেমন - রেডিয়েশন এর কারণেও ক্যান্সার হয়ে থাকে কারণ সূর্যের আলোতে রয়েছে আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি যা দীর্ঘদিন শরীরে পড়লে মানুষের চামড়ায় এক ধরনের ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়। তবে এইসব ক্যান্সার গুলো পশ্চিমা দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। আবার যেসব নারীরা হাঁটাচলা করে না এবং ওজন অনেক বেশি তাদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে।

আরো পড়ুনঃ রাজশাহীর -পপুলার- ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সকল ডাক্তারগণের তালিকা

তবে এসব ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি হয় মেনপোজ অর্থাৎ মাসিক বন্ধ হওয়ার পর যার কারণে এই ক্যান্সারকে বলা হয় পোস্টাল ওবেসিটি। এদের ওজন বেশি হওয়ার কারণে অনেক সময় লিভার ক্যান্সার ও হতে পারে। ধূমপানের কারণে শতকরা ৪০ভাগ ক্যান্সার হয়ে থাকে আর এই ক্যান্সার গুলো হয় সাধারণত ফুসফুস, মুখগহ্বর, কিডনি,মূত্র থলি, পাকস্থলী, খাদ্যনালী, প্যানক্রিয়াস, এমনকি ব্লাড ক্যান্সারও হয়ে থাকে। আবার অনিয়ন্ত্রিত খাবারের কারণে ও ক্যান্সার হয়ে থাকে যেমন যারা অতিরিক্ত মাংস বা চর্বি জাতীয় খাবার খেয়ে থাকেন যেখানে ফাইবারের অংশ খুব কম থাকে তাদের কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে যাকে রেটটাম ক্যান্সার বলা হয়।

ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ

কথায় আছে জন্ম, মৃত্যু আর বিয়ে এই তিন বিধাতা নিয়ে। কিন্তু তারপরও বর্তমান বিজ্ঞান গবেষণায় একথা বলেন যে, একজন ক্যান্সার রোগীর কিছু লক্ষণ দেখে বলে দেওয়া যায় তার আয়ু ফুরিয়ে এসেছে। ক্যান্সার গবেষণা সংশ্লিষ্ট ইনস্টিটিউট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ট্রেকাস এর এমডি এন্ডার সন ক্যান্সার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার এক প্রতিবেদনে বলেন, ক্যান্সারে আক্রান্ত মৃত্যু পথযাত্রী রোগীর সনাক্তের কিছু উপায় জানা গিয়েছে। আর এই গবেষণা করতে গিয়ে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত একটি রোগীকে প্রতিদিন দুইবার পর্যবেক্ষণ করে থাকেন।

আরো পড়ুনঃ হেপাটাইটিসের কারণ- লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে নিন

আর তিনি এই রোগীর ৫২ ধরনের দৈহিক ও মস্তিষ্কের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করেন এবং এই গবেষণার পথ ধরে তিনি আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে কারা মারা যাবে তা নিশ্চিত করতে পারেন। এরকম তিনি ৩৫৭ জন রোগীকে পর্যবেক্ষণ করেন যার মধ্যে ৫৭ শতাংশ রোগী মারা গেছেন আর বাকি ৫২ শতাংশ রোগী সনাক্তের দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই মারা গেছে। বিশিষ্ট ক্যান্সার গবেষক তার গবেষণায় বলেন, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর দুই থেকে তিন দিন আগে যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তা হল -

  • রোগীর মাথার সামনের দিকে নুয়ে আসে অর্থাৎ সে স্বাভাবিকভাবে মাথা উঁচু করতে পারে না।
  • তার চোখের সামনে আলো কম বা বেশি হলে চোখের পিউলির কোন প্রতিক্রিয়া হয় না অর্থাৎ রোগী চোখে প্রায় দেখে না বললেই চলে।
  • যখন সে কথা বলে তখন তার মুখ এবং জিহ্বার প্রতিক্রিয়া কমে যায় অর্থাৎ সে সঠিকভাবে কথা বলতে পারে না।
  • রোগীর নাক থেকে ঠোঁটের দুই কোন পর্যন্ত যে রেখা পড়ে অর্থাৎ একজন মানুষ হাসার সময় তার মুখে যে রেখা তৈরি হয় সেই রেখার মাঝখান দিয়ে ব্যাপক ভাঁজ পড়ে যায়।
  • রোগীর যে প্রত্যঙ্গে খাবারের উপাদান ও পুষ্টি শুষে নেয় অর্থাৎ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল এর ওপরের অংশে রক্তক্ষরণ হয়।
  • আক্রান্ত রোগীর কণ্ঠনালী থেকে গরগর আওয়াজ হয় অর্থাৎ গ্রাম্য ভাষায় যাকে বলা হয় ওপর টান নেওয়া।
  • ক্যান্সার আক্রান্ত কোন রোগীর মধ্যে যদি উপরের এই লক্ষণগুলো দেখা যায় তাহলে বুঝে নিতে হবে সে ২৪ ঘন্টা বা ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবে।

টিউমার

মানব দেহ অসংখ্য ছোট ছোট কোষের সমন্বয়ে গঠিত আর এই কোষগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর মারা যায় এবং সেখানে নতুন কোষের জন্ম হয়। সাধারণভাবে কোষগুলো নিয়মিত এবং নিয়ন্ত্রিতভাবে পরিবর্তন হতে থাকে। কিন্তু যখন এই কোষ গুলো কোন কারনে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে তখনই মানুষের ত্বকের নিচে মাংসের দলা বা চাকা দেখা যায় আর একেই টিউমার বলা হয়।

টিউমারের প্রকারভেদ

মানুষের দেহে কোষের ধরন এবং আচরণ অনুযায়ী টিউমার প্রধানত দুই প্রকারের হয়ে থাকে এগুলো হলো

বিনাইন টিউমার এবং

ম্যালিগনেন্ট টিউমার


বিনাইন টিউমার

বিনাইন টিউমারকে শরীরের জন্য এত ক্ষতিকারক হিসেবে মনে করা হয় না কারণ এই টিউমার গুলো হল -

মানুষের শরীরে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়

এই টিউমার একটি আবরণ দ্বারা বেষ্টিত থাকে

এই টিউমার গুলো মানুষের শরীরে যেখানে হয় সেখানেই থাকে তার আশেপাশে বা অন্য কোন স্থানে ছড়ায় না

এই ধরনের টিউমার গুলো সঠিকভাবে চিকিৎসা করা হলে বিভিন্ন ধরনের ওষুধের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়ে যায়

ম্যালিগনেন্ট টিউমার

ম্যালিগনেন্ট টিউমার মানুষের শরীরের জন্য অতি ক্ষতিকর এক ধরনের টিউমার কারণ মানুষের শরীরের যে টিউমার ক্যান্সার হয় তা এক ধরনের ম্যালিগনেন্ট টিউমার। আর এই টিউমারের বৈশিষ্ট্য গুলো হল-

  • রোগী শরীরে অতি দ্রুত বৃদ্ধি পায়
  • অতি দ্রুত আশপাশের টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে
  • ম্যালিগনেন্ট টিউমার রক্তের মাধ্যমে মানুষের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে
  • ম্যালিগনেন্ট টিউমার বা ক্যান্সার কোন আবরণ দ্বারা বেষ্টিত থাকে না যার কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পায়

ম্যালিগনেন্ট টিউমার পাথমিক অবস্থায় যদি চিকিৎসা নেওয়া যায় তবে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে আর যদি শেষ পর্যায়ে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া হয় তাহলে তা অধিকাংশ সময় ভালো হয় না

টিউমার ক্যান্সারের লক্ষণ

টিউমার ক্যান্সারের অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে যেগুলো দেখে আমরা সহজেই বুঝতে পারি এই টিউমারে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়েছে। এগুলো হলো -

  • শরীরের যে স্থানে টিউমার বা মাংসপিণ্ড জমা হয়েছে তা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে।
  •  প্রচন্ড ব্যথা হতে শুরু করে।
  • কখনো কখনো টিউমারের রং পরিবর্তন হয়।
  • হঠাৎ ওজন কমে যায়।
  • দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি অনুভূত হয়।
  • মাংসপিণ্ড অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে থাকে।
  • ত্বকের পরিবর্তন দেখা যায়।
  • ঘন ঘন জ্বর হতে থাকে।
  • যে অংশে টিউমার হয়েছে সেই অংশটা লাল হয়ে যাওয়া।
  • টিউমার অতিরিক্ত ফুলে যাওয়া বা বড় হওয়া।
  • যে স্থানে টিউমার হয়েছে সেখানে অতিরিক্ত তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া।
  • মানুষের শরীরের কার্য ক্ষমতা কমে যাওয়া।
  • মানুষের কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন হয় বা কণ্ঠস্বর ভেঙ্গে যায়।
  • দীর্ঘদিন ধরে কাশি সমস্যা হতে পারে।
  • মানুষের মলত্যাগের অভ্যাসেরও পরিবর্তন দেখা যায়।
  • অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে আবার ডায়রিয়া ও হতে পারে।
  • টিউমার আক্রান্ত স্থানে অকারণে রক্তক্ষরণ হতে পারে বা শরীরের অন্য কোন স্থান থেকেও রক্তক্ষরণ হতে পারে।

ক্যান্সারের লক্ষণ হলে একজন মানুষ তার শরীরের স্বাভাবিক পরিবর্তন দেখেই বুঝতে হবে কারণ  সুস্থ মানুষের শারীরিক অবস্থা এবং রোগাক্রান্ত মানুষের শারীরিক অবস্থার অবশ্যই পরিবর্তন থাকে। তাই শরীরের যদি কোন পরিবর্তন থাকে এবং এই লক্ষণগুলো আপনার শরীরের মধ্যে থাকে তাহলে অবশ্যই বুঝবেন আপনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। তাই দেরি না করে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। মনে রাখবেন, সুস্থ দেহ সুস্থ মন এর নামই স্বাস্থ্য।

টিউমার থেকে কি ক্যান্সার হয়

মানুষের দেহে ক্যান্সার হয় এক ধরনের টিউমার থেকে আর টিউমার হল মানুষের দেহের অস্বাভাবিক কোষ। মানুষের শরীরের কোষগুলো যখন চামড়ার নিচে স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় তখন টিউমারের সৃষ্টি হয়। মানুষের শরীরে সাধারণত দুই ধরনের টিউমার দেখা যায় যেমন - বিনাইন টিউমার এবং ম্যালিগনেন্ট টিউমার। তবে বিনাইন টিউমার হলে সাধারণত ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে কারণ এই টিউমার মানুষের শরীরে খুব ধীর গতিতে বড় হয় এবং দেহের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে কোনভাবেই ছড়ায় না এবং কোনরকম সমস্যারও সৃষ্টি করে না। তাই সঠিক সময়ে চিকিৎসা করালে এই টিউমার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

আর ম্যালিগনেন্ট টিউমার হল এক ধরনের ক্যান্সার আর এই টিউমার থেকে মানুষের শরীরে ক্যান্সার হয়ে থাকে। কারণ ম্যালিগান্ট টিউমার রোগই শরীরে অতি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং আশপাশের টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে। আবার রক্তের মাধ্যমে মানুষের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এই টিউমার ছড়িয়ে পড়ে যার কারণে মানুষ ম্যালিগনেন্ট টিউমার দ্বারা আক্রান্ত হলে শতকরা ৯৯% সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে তার মৃত্যু অবধারিত।

ক্যান্সার হলে কত দিন বাঁচে

মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে ক্যান্সার হলে মানুষ কত দিন বাঁচে? আসলে ক্যান্সার হল আমাদের সমাজে এমন একটি রোগ যা শুনলেই মানুষ থ মেরে যায়। মানুষের মন আতঙ্কে ভরে ওঠে ভাবে এই বুঝি আমি মরে যাব! আমার আয়ু শেষ! কিন্তু আসলে কি তাই? মনে রাখবেন, জন্ম - মৃত্যু একমাত্র আল্লাহ তাআলার হাতে তিনি যতদিন আমাদের হায়াত দিয়েছেন আমরা ঠিক ততদিনই বেঁচে থাকব। তবে ক্যান্সারের বিভিন্ন স্টেজ রয়েছে যদি প্রথম স্টেজে ক্যান্সার সনাক্ত করতে পারা যায় এবং সঠিকভাবে চিকিৎসা করা যায় তাহলে মানুষ সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে যায়।

আরো পড়ুনঃ  বাত ব্যথা কি - বাত ব্যথা হলে করণীয় জেনে নিন

আর যদি হেঁয়ালি করে তাহলে অনেক সময় মানুষ লাস্ট স্টেজে পৌঁছে যায় তখন আর কিছুই করার থাকে না। তাই শরীরে কোন রকম পরিবর্তন দেখা দিলে এবং মানুষের বয়স যখন ৪০ বছর পার হয়ে যায় তখন তার প্রতি বছর একবার করে শরীর পরীক্ষা করানো উচিত এবং শরীরের বিভিন্ন লক্ষণ দেখে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। তাহলে ক্যান্সার থেকে মুক্ত থাকা যাবে। আর যদি লাস্ট স্টেজে পৌঁছে যায় তাহলে আর কারো হাতে কিছু করার থাকে না।

ক্যান্সার কি ভালো হয়

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে ক্যান্সার কি ভালো হয়? আসলে আমাদের মনে এই প্রশ্নটা যাগার আগে আমাদের জানতে হবে আমরা কোন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত। যেমন কেউ যদি টিউমার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় তাহলে তা সঠিকভাবে চিকিৎসা করলে অনেক সময় সুস্থ হওয়া সম্ভব। আবার যদি কেউ ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় তাহলে এই ক্যান্সারের চিকিৎসা খুব দ্রুত শুরু করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে ডাক্তারগণ পর্যায়ে বুঝে কেমো থেরাপি বা কখনো শুধু ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা করালেও সম্পন্ন সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘ মেয়াদী।

আবার ক্যান্সারের বিভিন্ন ধরনের প্রকারভেদ রয়েছে। ক্যান্সারের প্রকারভেদ অনুযায়ী এর চিকিৎসার পদ্ধতি ও ভিন্ন ভিন্ন যেমন ক্রনিক লিউকোমিয়া রোগী যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা নিয়ে থাকে তাহলে সে অনেক দিন ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারে। আবার মালিকুলার টার্গেটে থেরাপি আবিষ্কৃত হওয়ায় ক্যান্সার চিকিৎসার উন্নতি ঘটেছে। যদি কেউ ক্রনিক আক্রান্ত হয় তাহলে সে যদি থেরাপি নেয় তাহলে সে ক্ষেত্রে শতকরা ৮৫ ভাগ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে অ্যাকিউট লিউকোমিয়ায় কিছু লিম্ফোমায় অস্থিমজ্জা স্থাপন করার প্রয়োজন হয়।

মহিলাদের ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ


আমাদের সবার মনেই একটি ধারণা রয়েছে যে ব্লাড ক্যান্সার মানেই মরণ ব্যাধি কিন্তু আসলে তা নয় সঠিক সময়ে যদি রোগ নির্ণয় করা যায় এবং চিকিৎসা করা যায় তাহলে অনেক সময় ব্লাড ক্যান্সার ভালো হয় এবং অধিকাংশ সময়ে নিয়ন্ত্রণেও রাখা যায় তবে একিউট লিউকেমিয়া মারাত্মক ক্যান্সার যার দ্রুত চিকিৎসা না নিলে সমস্যার সৃষ্টি হয় তবে ব্লাড ক্যান্সার মহিলা এবং পুরুষ নয় সবার ক্ষেত্রে একই লক্ষণ দেখা যায় আর ব্লাড ক্যান্সারের ক্ষেত্রে যে লক্ষণগুলো সাধারণত পরিলক্ষিত হয় তা হলো -

  • শরীরের রক্তস্বল্পতা দেখা যায়
  • শরীর অতিরিক্ত দুর্বলতা বোধ হয়
  • খাবারের অরুচি দেখা যায়
  • বুক ধরফর করে
  • পায়ে পানি জমে যায়
  • চেহারা ঠেকাসে হয়ে যায়
  • দীর্ঘদিন একটানা শরীরে জ্বর থাকা
  • ঘন ঘন জ্বর হওয়া
  • গ্লান্ড ফুলে যাওয়া
  • লিভার এবং প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া
  • কোমর ব্যথা হওয়া
  • শরীরের বিভিন্ন হার ব্যথা করা
  • অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ যেমন - 
  • দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত পড়া
  • প্রসাব পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া
  • কাশি দিলে কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া
  • মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিক হলে অতিরিক্ত রক্ত চাওয়া বা মাসিক বেশি হওয়া

উপরের লক্ষণগুলো যদি দেখা যায় সে ছেলে হোক বা মেয়ে হোক তাহলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত লন্ডনের ইউনিভারসিটি কলেজের একজন ক্যান্সার বিশেষক এবং প্রধান গবেষক্যাট্রিনা হুইটেকার বলেন," সাধারণ মানুষ মনে করে ডাক্তার বন মানুষকে স্বাস্থ্য নিয়ে বেশি উৎসাহিত করে বা উদ্বিগ্ন করে যা উচিৎ নয় আবার এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে বিব্রত বোধ করে কারণ তারা মনে করে যে তারা ডাক্তারের সময় নষ্ট করছে বা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সম্পদ যথেষ্ট ভাবে নষ্ট করছে"।


তবে তিনি মনে করেন ডাক্তারদের উচিত এই পাত্র পাঠানো যে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি কোন একটি উপসর্গ দেখতে পায় তাহলে তাকে সেই অবহেলা না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত এবং ডাক্তারের সহায়তা নেওয়া উচিত কারণ যে কোন উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা করা উচিত নয়। কারণ ক্যান্সারের চিকিৎসা বা থেরাপি আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে ৭0 দশকের পর ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর বেঁচে থাকার হার তিনগুণ বেড়ে গেছে তবে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করালে সবাই মানুষ মারাত্ম ক বিপদ থেকে রক্ষা পায়।

পেটের ক্যান্সারের লক্ষণ


মানুষের দেহের পাকস্থলী বা পেট হলো এমন একটি অঙ্গ যা খাদ্যকে গ্রহণ করে এবং তা ভেঙ্গে হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। আর পেটের মধ্যে যখন কোন অভ্যন্তরীণ ক্যান্সার কোষ তৈরি হয় তখন শুরু হয় পেটের ক্যান্সার যাকে গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার বলা হয়ে থাকে। আর এই ক্যান্সার সাধারণত অনেক ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। তবে পেটে ক্যান্সার হলে কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যায়। লক্ষণগুলো হলো-

  • সারাক্ষণ পেটে ব্যথা অনুভূত হওয়া।
  • ক্ষুধা কমে যাওয়া।
  • অল্প খাবারে পেট ভর্তি হওয়া।
  • খাওয়ার পর পেট ফোলা অনুভব হওয়া।
  • সব সময় অস্বস্তিতে ভোগা।
  • বমি বমি ভাব।
  • বদহজম হওয়া।
  • সব সময় অম্বল ভাব লাগা।
  • ক্লান্তি এবং দুর্বল লাগা।
  • ত্বক এবং চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া।
  • মলের মধ্যে রক্ত বা কালো টরিমন যাকে মেলেনা বলা হয় ইত্যাদি যাওয়া।
  • অস্বাভাবিক হারে ওজন কমে যাওয়া।
  • অনেক সময় ক্যান্সারের কোষগুলি পাকস্থলীর প্রাচীর ক্ষয় করে এবং ছিদ্র হয়ে যায়।

শেষ কথা

ক্যান্সার হল একটি নীরব ঘাতক কারন এটি প্রাথমিক পর্যায়ে এর লক্ষণ বা উপসর্গ খুব একটা বোঝা যায় না। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে যদি সনাক্ত করতে পারা যায় তবে চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক সময় সুস্থ হওয়া সম্ভব হয়। তবে সবচেয়ে ভালো এবং কার্যকরী উপায় হল সচেতন থাকা এবং কোন একটু সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url